‘স্থানীয় সরকার ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে’

‘স্থানীয় সরকার ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে’
 http://adf.ly/1Ykl3J
বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান। কেন্দ্রীয় সরকারই স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী এবং কার্যকর করার পদক্ষেপ নেয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হলে তৃণমূলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। গতকাল গুলশানের স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে ব্র্যাক ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর উদ্যোগে ‘স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের শিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ মুসার সভাপতিত্বে এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্টের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম-এর পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, ব্র্যাক- এর পরিচালক আন্না মিন্‌জ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব এওয়াইবি সিদ্দিকী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, দাতা সংস্থা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা এ প্রকল্পের উপকারভোগী জনপ্রতিনিধি, স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা সিভিল সোসাইটি, ইয়ুথ লিডার এবং তথ্য বন্ধুরা তাদের সফলতা ও  অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। ড. আকবর আলি খান বলেন, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হলে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, জনপ্রতিনিধিদের সামর্থ্য বিকাশ এবং তৃণমূলে সংঘটিত সিভিল সোসাইটি গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এম হাফিজ উদ্দিন প্রকল্পের কার্যক্রমের ওপর আলোকপাত করে বলেন ভালো কাজ হয়েছে। এটা ছড়িয়ে দিতে হবে। সরকার চায় না স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হোক এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাই আমাদেরকেই এটা করতে হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, মনে হচ্ছে সংসদ থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত একদলীয়শাসন চালু থাকবে। ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের স্থানীয় সরকার উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারেনি। আগে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত হতেন। এখন সেখানে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব। এ অবস্থায় নতুন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, দলীয়করণের কারণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বায়ত্তশাসন আরো কমবে। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে হলে স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। ব্র্যাক ও দি হাঙ্গার প্রজেক্টের স্থানীয় শক্তিশালী প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরে ব্যাক-এর পরিচালক আন্না মিন্‌জ বলেন, এ দুটি প্রতিষ্ঠান এ লক্ষে ২০১০ সাল থেকে কাজ করছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪টি জেলার ১৪টি উপজেলার ৬১টি ইউনিয়ন পরিষদকে বিধিবদ্ধভাবে পরিচালনা ও কার্যকর করার চেষ্টা করা হয়েছে। তৃণমূলে সিভিল সোসাইটি তৈরি এবং অ্যাডভোকেসি করা হয়েছে। এসব ইউনিয়নকে এক মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ড. বদিউল আলম বলেন, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হলে তাকে কার্যকর করতে হবে এবং এর মাধ্যমে মানুষের জীবনমানে পরিবর্তন আনতে হবে। এ ছাড়া আইনানুযায়ী পরিষদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং তৃণমূলে একদল প্রশিক্ষিত এবং সোচ্চার স্বেচ্ছাব্রতী তৈরি করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে ড. মোহাম্মদ মুসা বলেন, বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে আইনের শাসন থাকবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে মানুষ তাদের সেবা ও অধিকার পাবে। তিনি বলেন, সদিচ্ছা থাকলে সীমাবদ্ধতার মধ্যেও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা সম্ভব। এজন্য জনপ্রতিনিধি এবং জনগণকে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। মতবিনিময় সভায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা জনপ্রতিনিধিরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। বলেন, আগে আমাদের নানাভাবে দোষারোপ করা হতো। চোর বলে আখ্যায়িত করা হতো। কিন্তু এই প্রকল্পের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং তাদের মনিটরিংয়ের কারণে আমরা প্রতি ওয়ার্ডে নিয়মিত ওয়ার্ড মিটিং করি। সেখানে সরকার থেকে আসা বরাদ্দ নিয়ে কথা হয়। তারাই সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন  অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন্‌ খাতে এ প্রকল্পের বরাদ্দ ব্যয় করা হবে। ফলে জনপ্রতিনিধিরা স্বচ্ছতা বজায় রাখতে পারেন। আবার জবাবদিহিতাও নিশ্চিত হয়। তাছাড়া ওয়ার্ডবাসীর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠার কারণে অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর ব্যাপারে তারা সহযোগিতা করেন। ফলে সরকারি বরাদ্দের বাইরেও এই সব আয় দিয়ে উন্নয়নমূলক কাজ করা সম্ভব হয়। উল্লেখ্য, ব্র্যাক ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট পরিচালিত এ প্রকল্পটির লক্ষ ছিল স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করে ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করা এবং এর মধ্যদিয়ে এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা। প্রকল্পটি ইউনিয়ন পরিষদ আইন  ২০০৯ অনুযায়ী পরিষদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে পরিষদের দক্ষতা বৃদ্ধি, জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং প্রান্তিক গোষ্ঠির জন্য সরকারি সেবাসমূহ প্রাপ্তিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণকে সচেতন ও সংঘবদ্ধ করে ইউনিয়ন পরিষদের স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হয়েছে বলে মতবিনিময় সভায় জানানো হয়।